বিশ্বকাপ জিততে পারেননি যে ১০ তারকা

admin May 24, 2019

রংপুর এক্সপ্রেস ডেস্ক:
বিশ্বকাপ জেতা কি খুব সহজ! শচীন টেন্ডুলকারকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন- ব্যাটিংয়ের অজস্র রেকর্ড যার পায়ে লুটিয়েছে, সেই তার হাতে ট্রফি উঠেছে জীবনের শেষ ও ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ বিশ্বকাপে। শেষ পর্যন্ত জীবনের যতটুকু প্রাপ্তি তার সবটুকু পেয়েই ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন ভারতের লিটল মাস্টার।


কিন্তু এই টুর্নামেন্টের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে এমন অনেক সেরা ক্রিকেটার আছেন, যারা সোনালি ট্রফিটি ছুঁয়ে না দেখার আক্ষেপ সঙ্গে করে বিদায় নিয়েছেন- তাদেরই কয়েকজনের কথা উঠে এসেছে আইসিসির সাইটে:


১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে গ্রাহাম গুচগ্রাহাম গুচ, ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ জেতার জন্য খুব বড় কোনও অবদান রাখতে পারেননি গ্রাহাম গুচ। বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে প্রজন্মের এই সেরা ক্রিকেটার খেলেছেন তিনটি ফাইনাল। ১৯৯২ সালের ফাইনালে ইংল্যান্ডের অধিনায়কও ছিলেন। কিন্তু ১৯৭৯ ও ১৯৮৭ সালের মতো আবারও শিরোপা চলে যায় হাতছোঁয়া দূর থেকে।


১৯৮৭ সালের সেমিফাইনালে মুম্বাইয়ে ভারতের বিপক্ষে তার ১১৫ রানের ইনিংস এখনও ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম সেরা। ১৯৭৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু গুচের, শেষ ১৯৯৫ সালে। এই লম্বা সময়ে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে রেকর্ড ২২,২২১ রান করলেও তার আক্ষেপ থেকে গেছে একটি বিশ্বকাপ ট্রফি।


১৯৯২ সালের ফাইনালে আউট বোথামইয়ান বোথাম, ইংল্যান্ড ইংল্যান্ডের সঙ্গে দুটি ফাইনাল খেলেছেন ইয়ান বোথাম। বড় এই মঞ্চে তার অলরাউন্ড প্রতিভা ছিল অবিশ্বাস্য। তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে বল হাতে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের জন্য ছিলেন হুমকি, বিশেষ করে ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে।


ওইবার ১০ ম্যাচে ১৬ উইকেট নেন বোথাম। ফাইনালে ওঠার পথে এমন ছন্দময় বোলিং করেও জিততে পারেননি ট্রফিটা। তার দলকে ২২ রানে হারিয়ে পাকিস্তান জেতে প্রথম বিশ্বকাপ।
ওয়াকার ইউনিসেরও ভাগ্য খারাপওয়াকার ইউনিস, পাকিস্তান ওয়াকার ইউনিসের দুর্ভাগ্যই বলা চলে। তার প্রজন্মের অন্যতম সেরা এই ফাস্ট বোলার ১৯৯২ সালে পাকিস্তানের প্রথম বিশ্বকাপ জয়েই ট্রফি ছুঁতে পারতেন। কিন্তু ইনজুরির কারণে ওই টুর্নামেন্টে খেলা হয়নি তার।


ওই সাফল্যের পথে ওয়াসিম আকরাম ১৮ উইকেট নিয়ে আসরের শীর্ষ বোলার ছিলেন। তার সঙ্গে পুরোনো বল হাতে ওয়াকারের রিভার্স সুইং আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারতো। তবে দুজনের এই বোলিং জুটি আবারও পাকিস্তানকে ফাইনালে নিয়ে যায় ১৯৯৯ সালে। কিন্তু তাদের জ¦লে ওঠার আগেই শেন ওয়ার্নের কাছে ধসে যায় পাকিস্তান।


সৌরভ গাঙ্গুলীসৌরভ গাঙ্গুলী, ভারত ১৯৯৯ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনটি বিশ্বকাপ খেলেন সৌরভ গাঙ্গুলী। ২০০৩ সালের ফাইনালে ভারতের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। তার ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ। ওইবার শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে যাওয়ার পথে তিনটি সেঞ্চুরি হাঁকান। আগ্রাসী ও নির্ভীক ব্যাটিংয়ের প্রতীক হয়ে ছিলেন বিশ্বকাপে, ২২ ম্যাচ খেলে ৫৫.৮৮ গড়ে ১০০৬ রান ছিল তার।


গাঙ্গুলী যাদের গড়ে তুলেছেন, সেই তারাই তার ক্যারিয়ারে শেষ বিশ্বকাপের পরের আসরে ২০১১ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। সারা জীবনের আক্ষেপ থেকে যায় তার।


ব্রায়ান লারাব্রায়ান লারা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট রেকর্ডের বরপুত্র বলা হয় ব্রায়ান লারাকে। ভক্তদের কাছে টেস্ট ক্রিকেটে তিনি পূজনীয়। ওয়ানডেতেও ছিল তার সমান দাপট। পোর্ট অব স্পেনের এই সম্রাটের আগে খুব বেশি কেউ ১০ হাজার ওয়ানডে রানের মাইলফলকে পৌঁছাতে পারেননি। অবশ্য এখনক তিনি দশম স্থানে।


২৯৯ ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে তিনবার দেড়শ ছাড়ানো ইনিংস খেলেছেন লারা। ১৭ বছরে এত অর্জনের মাঝেও তার জীবনের আক্ষেপ হয়ে আছে একটিও বিশ্বকাপ না জেতা।


ল্যান্স ক্লুজনারল্যান্স ক্লুজনার, দক্ষিণ আফ্রিকা ল্যান্স ক্লুজনার, ব্যাটে-বলে দারুণ প্রতিভাবান এক ক্রিকেটার। তার হাত ধরেই যেন চোকার্স শব্দটি আরও শক্ত করে লেগে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার গায়ে। ১৯৯৯ সালের সেমিফাইনাল হয়ে আছে তার জীবনের বড় ‘ট্র্যাজেডি’। শেষ বলে তার ডাকে সাড়া না দিয়ে রান আউট হন অ্যালান ডোনাল্ড। অল্পের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথমবার ফাইনালে তোলার মহানায়ক হতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়েন ক্লুজনার।


জ্যাক ক্যালিসজ্যাক ক্যালিস, দক্ষিণ আফ্রিকা ল্যান্স ক্লুজনারের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারের তালিকায় আছেন জ্যাক ক্যালিস। টেস্ট ও ওয়ানডেতে ব্যাটে-বলে নিজের সেরাটা দিয়ে গেছেন তিনি। ওয়ানডেতে ১১ হাজার রানের সঙ্গে উইকেট নেন ২৭৩টি। ওয়ানডেতে ১০ হাজার রান ও ২৫০ উইকেট নেওয়া অন্যজন হলেন সনাথ জয়াসুরিয়া। ১৭ সেঞ্চুরি ও ৮৬ ফিফটিতে ১৮ বছরের ক্যারিয়ার শেষ করেছেন ক্যালিস। কিন্তু অন্য দক্ষিণ আফ্রিকান গ্রেটদের মতো তারও আক্ষেপ থেকে গেছে একটি ট্রফির।


কুমার সাঙ্গাকারাকুমার সাঙ্গাকারা, শ্রীলঙ্কা ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ছিল কুমার সাঙ্গাকারার ওয়ানডে ক্যারিয়ারকে আরও ‍উৎকর্ষ করার দারুণ মঞ্চ। জীবনের শেষ বিশ্বকাপে কী দারুণই না খেললেন তিনি। এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান টানা চারটি সেঞ্চুরি হাঁকান। বিশ্বকাপ শেষ করেন দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যাটসম্যান হয়ে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে বিদায় নিতে হয় তাকে।


ওয়ানডের সর্বকালের শীর্ষ ব্যাটসম্যানের তালিকায় সাঙ্গাকারার উপরে আছেন শুধু শচীন টেন্ডুলকার। কিন্তু ভারতীয় ব্যাটিং গ্রেটের মতো পূর্ণতা নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ হয়নি তার। ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কার প্রথম বিশ্বকাপ জয়ে তিনি ছিলেন খুব ছোট, ২০০৭ ও ২০১১ সালে ফাইনালে উঠলেও ছোঁয়া হয়নি ট্রফি- দুটি টুর্নামেন্টই শেষ করেন ৫০ এর উপরে গড় রান করে।


এবি ডি ভিলিয়ার্সএবি ডি ভিলিয়ার্স, দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাট হাতে এবি ডি ভিলিয়ার্স যা করতে পারেন, সেটা অন্য ব্যাটসম্যানরা স্বপ্নও দেখেন না। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৫৩.৫০ গড়ে রান, কিন্তু স্ট্রাইক রেট বলে তার দুর্বার ব্যাটিংয়ের কথা- ১০১.০৯!


ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩১ বলে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড তো তার ব্যাটেই মানায়। প্রোটিয়ার এই ব্যাটসম্যান শুধু পরিসংখ্যানকে সমৃদ্ধ করেছেন তা নয়। অভিনব সব শট খেলার সঙ্গে ডেথ বোলারদের জন্য দুঃস্বপ্ন ছিলেন তিনি। একা হাতে দলকে উদ্ধার করতেও বেশ পারদর্শী এই প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান। ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে এমন দর্শনীয় ক্রিকেট খেললেও তার হাতে ওঠেনি বিশ্বকাপ ট্রফিটা।


শহীদ আফ্রিদি, পাকিস্তান ‘বুম বুম’ নাম এমনিতেই হয়নি। তার ব্যাটে ঝড় না উঠলে দর্শকরা পুড়তো আক্ষেপে। বড় বড় শট না খেলতে পারলে নিজেও অস্থির হয়ে উঠতেন। ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি সিরিজে ৩৭ বলে করা দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড অক্ষত ছিল দীর্ঘদিন।


খণ্ডকালীন বোলার হিসেবে অনুশীলন করা আফ্রিদিই একসময় কব্জির ঘূর্ণি জাদু দেখাতে শুরু করেন। সর্বকালের শীর্ষ বোলারের তালিকায় তিনি শেষ করেছেন পাঁচ নম্বরে থেকে। প্রতিষ্ঠিত এই অলরাউন্ডার গ্রেটদের কাতারে থেকেই শেষ করেছেন ক্যারিয়ার। কিন্তু ১৯৯৯ সালে ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপেই ফাইনালে উঠেও শিরোপা না জেতার আক্ষেপ কাটাতে পারেননি বাকি সময়ে।

এই বিভাগের আরও খবর

পরবর্তী পোস্ট
« Prev Post
পূর্বের পোস্ট
Next Post »
নিচের বক্সে মন্তব্য লিখুন

Disqus
আপনার মন্তব্য যোগ করুন

No comments

Image Gallary

 
1 / 3
   
Caption Text
 
2 / 3
   
Caption Two
 
3 / 3
   
Caption Three