অনলাইন ডেস্ক:
মুসলিমবিরোধী সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্বিতীয় দিনের মতো শ্রীলঙ্কায় দেশব্যাপী রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই দেশটিতে ইস্টার সানডে উদযাপনের সময় কয়েকটি গির্জা ও অভিজাত হোটেলসহ আট স্থানে একযোগে ভয়াবহ সিরিজ বোমা হামলা চালানো হয়।
ওই হামলায় ২৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়। হামলার পর থেকেই দেশটিতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর মধ্যেই দেশজুড়ে মুসলিমবিরোধী সহিংসতা শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে মুসলিমদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এ পর্যন্ত সহিংসতায় একজন মারা গেছে বলে স্থানীয় পুলিশ নিশ্চিত করেছে। সহিংসতা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৬০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে চরম ডানপন্থি বৌদ্ধ গোষ্ঠীর এক নেতাও রয়েছেন।
শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন শহরে দাঙ্গাকারীদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। দেশটির এমন পরিস্থিতি শান্ত থাকতে এবং ঘৃণা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। মঙ্গলবার থেকে দেশটিতে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ যেখানে সহিংসতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে সেখানে কারফিউ আরও দীর্ঘ সময় ধরে জারি থাকবে।
দেশের সকলকে শান্ত থাকার জন্যে আহ্বান জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রানিল বিক্রমাসিংহে। উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে গত মাসের ভয়াবহ এই হামলার তদন্ত কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
শ্রীলঙ্কার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত শহর কিনিয়ামায় একটি মসজিদের দরজা-জানালা ভাঙচুর করেছে আক্রমণকারীরা। এছাড়া মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ কোরআনের কয়েকটি কপিও মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। মসজিদের ভবনে তল্লাশির দাবি জানিয়ে জনতা সেখানে পুলিশি অভিযানের দাবি জানালে এক পর্যায়ে সেখানে হামলার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে, ফেসবুকে এক ব্যক্তির দেওয়া বিতর্কিত একটি পোস্টের পর খ্রিষ্টান-প্রধান শহর চিলৌতে মুসলিমদের কিছু দোকান ও মসজিদে আক্রমণের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া ৩৮ বছর বয়সী সেই মুসলিম ব্যবসায়ীকে খুঁজে বের করে গ্রেফতার করা হয়।
দেশটির উত্তর-পশ্চিমের পুত্তালাম জেলায় এক ব্যবসায়ীর দোকানে ক্রুদ্ধ জনগণ আক্রমণ করার পর ছুরিকাঘাতে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। হেট্টিপোলা শহরেও তিনটি দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে দাঙ্গা-হাঙ্গামা আরো ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ আরো কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার সিংহভাগই বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। সেখান প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ মুসলিম। গত মাসে শ্রীলঙ্কায় যে হামলা চালানো হয়েছে স্থানীয় একটি জঙ্গি গোষ্ঠীই ওই হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। তবে হামলায় নিজেদের দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
এক মুসলিম ব্যবসায়ী বিবিসিকে বলেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন এখন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। সোমবার কলম্বোর উত্তরাঞ্চলের একটি শহরতলীতে অবস্থিত তার একটি ফ্যাক্টরিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।