দিনাজপুর: দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া খনি থেকে কয়লা গায়েবের ঘটনার সঙ্গে মন্ত্রী-উপদেষ্টারাও জড়িত রয়েছেন বলে দাবি করেছেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকারের উচ্চপদস্থ এসব দুর্নীতিবাজ দায়মুক্তি আইনের মাধ্যমে রেহাই পেয়ে যাচ্ছেন। এজন্য এই আইন বাতিলেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি।
আজ রোববার ফুলবাড়ী দিবস উপলক্ষে দিনাজপুরের নিমতলা মোড়ে আনু মুহাম্মদ এসব কথা বলেন। পুরো মন্ত্রণালয়ই এখন দুর্নীতিগ্রস্ত এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, জনগণ তাদের দায়মুক্তি কেন দেবে? এবং তাদের বিচার না হওয়ার কারণে তাদের দায়মুক্তি দেওয়ার কারণেই এই যে একের পর এক অনিয়ম প্রকাশিত হচ্ছে, যার শিকার হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ। বড়পুকুরিয়ায় কয়লা লুণ্ঠন হয়েছে। যে পরিমাণ কয়লা লুট হয়েছে, তা পাচার করতে প্রায় ১৪ হাজার ট্রাকের দরকার বিশাল সাইজের। বিশাল সাইজের ট্রাকের দরকার। এই পরিমাণ দুর্নীতি বছরের পর বছর হচ্ছে। দুর্নীতি কেন হতে পারল? হতে পারল এই জন্য, পুরো মন্ত্রণালয়ই এখন অনিয়ম-দুর্নীতির কেন্দ্র এবং দায়মুক্তি আইন দিয়ে তাদের রক্ষা করা হচ্ছে। সে জন্য আমরা এই ফুলবাড়ী দিবসদের এক যুগ উপলক্ষে দায়মুক্তি আইন বাতিলেরও দাবি।
নিজেদের তদন্ত অনুযায়ী জাতীয় কমিটি এ ঘটনায় মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে জানিয়েছে আনু মুহাম্মদ বলেন, এখান থেকে আমাদের যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, তারা আলাদা আলাদাভাবে কর্মসূচি নিয়েছে। জাতীয় কমিটিরও কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল এবং সামনে আমাদের আরো কর্মসূচি আছে।
ঐতিহাসিক ফুলবাড়ি দিবস আজ, ১২ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি ৬ দফা চুক্তি (ওই সময়ের কিছু ছবিসহ)
এটা আমরা ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচি করে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি যে এটার সঙ্গে আমাদের অনুসন্ধান অনুযায়ী, আমাদের তদন্ত অনুযায়ী এর সঙ্গে মন্ত্রী-উপদেষ্টারাও জড়িত। তাঁদেরও হিসাবে এনে তদন্ত করতে হবে এবং শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। যদি সরকার এঁদের বিচারের ব্যাপারে যথেষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, যদি তদন্ত কমিটির নামে অতীতের মতো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তাহলে জাতীয় কমিটি দেশের নাগরিকদের নিয়ে গণআদালতের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে জনগণের কাছে হাজির করবে। এর আগে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি নিমতলা মোড়ে জমায়েত, কালো ব্যাজ ধারণ, শোক র্যালি ও স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। শেষে নিমতলা মোড়ে এক সমাবেশ করা হয়।
বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আনু মোহাম্মদ, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, গতকাল রোববার স্থানীয় অরাজনৈতিক সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠন ও ফুলবাড়ীবাসীর কর্মসূচির মধ্যে ছিল গণজমায়েত, কালো ব্যাজ ধারণ, শোক মিছিল ও স্মৃতিস্থম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শপথ গ্রহণ ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান।
৮ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২৫
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, স্থায়ী সম্পদ ধ্বংস করে ফুলবাড়ীতে কয়লাখনি চাই না, ফুলবাড়ী থেকে অবিলম্বে এশিয়া এনার্জির অফিস ও পরীক্ষাগার প্রত্যাহার, ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট প্রশাসন কর্তৃক গুলিতে হতাহত ও পঙ্গুত্ববরণসহ পুরো ঘটনার সরকারিভাবে তদন্ত প্রতিবেদন অবিলম্বে জনসমক্ষে প্রকাশ করা, স্মৃতিস্তম্ভের কাজে উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও সব সময় জনসাধারণের জন্য উন্মুক্তকরণসহ ব্যবহার উপযোগী করে রাখা, ফুলবাড়ী কয়লাখনি নিয়ে ষড়যন্ত্রকারী দালালদের চিহ্নিত করা ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার বাস্তবায়ন।
২০০৬ সালের এই দিনে আন্দোলনকারীদের ওপর টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করা হয়। তৎকালীন বিডিআরের গুলিতে নিহত হয় আল আমিন, সালেকীন ও তরিকুল। আহত হয় দুই শতাধিক আন্দোলনকারী। আহতদের মধ্যে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করে। ওই দিনই ফুলবাড়ীতে অবস্থিত এশিয়া এনার্জির অফিস ভাংচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা। পাশাপাশি শুরু করে লাগাতার হরতাল। এতে করে বন্ধ হয়ে যায় ফুলবাড়ীর সঙ্গে জেলা-উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাই ফুলবাড়ী শোক দিবস উপলক্ষে ফুলবাড়ীর মানুষ স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে নিজ নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান একবেলা বন্ধ রাখে। রাস্তায় মানুষের ঢল নামে। সকল প্রকার যানবাহন চলাচল দুপুর ১টা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে ও সভাস্থলে ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।