ঢাকা: ইদের সময় বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে আগামী মঙ্গলবার বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি এও বলেন, ইদে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের চেষ্টা থাকবে। তবে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা লোডশেডিংমুক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। যমুনার এপারে বিদ্যুৎ সারপ্লাস থাকলেও তা উত্তরাঞ্চলে নেওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে পুরোপুরি লোডশেডিংমুক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে গ্যারান্টি দেওয়া যাচ্ছে না। বলেন, বড় পুকুরিয়ার একটি চালু করার পর রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজ ওঠানামা বন্ধ হবে। ইদের সময় মানুষের ভোগান্তি কমাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ইদের সময়ে চালু রাখার সিদ্ধান্ত রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরো সময়ে চালু রাখা গেলে অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে থাকতো বিদ্যুৎ সরবরাহ। বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, সেখানে কাছে পাঁচ-ছয় হাজার মেট্রিক টন কয়লা মজুদ রয়েছে। ৮০ মেগাওয়াট লোডে একটি ইউনিট ছয়-সাতদিন চালানো সম্ভব হবে। যাতে উত্তরাঞ্চলে কিছুটা দুর্ভোগ কমে যাবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামীকাল সোমবার সকালে উৎপাদনে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, পিকআওয়ার নাগাদ (সন্ধ্যা) বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হাকিম সরকার বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করতে হলে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন। আবার বন্ধ করতে হলেও কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা প্রয়োজন হয়।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি মুখে স্থাপিত দেশের একমাত্র কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কয়লা সংকটের কারণে গত জুলাই মাসের ২২ তারিখে বন্ধ করে দেওয়া হয়। উত্তরাঞ্চলের বাড়ন্ত চাহিদায় লোড ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করতো এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বসে যাওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে (পিডিবি)। উত্তরের ৮ জেলায় ব্যাপক লোডশেডিং করতে হচ্ছে। বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তিনটি ইউনিটের মোট উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ৫২৫ মেগাওয়াট। এরমধ্যে একটি ইউনিট নিয়মিত সার্ভিসিংয়ে রয়েছে, যার উৎপাদন ক্ষমতা ১২৫ মেগাওয়াট। এই ইউনিটটি সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ চালুর উপযোগী হবে। ১২৫ ও ২৭৫ মেগাওয়াটের দু’টি ইউনিট এখনই উৎপাদনের উপযোগী রয়েছে।
২০১৭ সাল থেকে বড় পুকুরিয়ার ২০১০ নম্বর ফেসে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়। প্রায় বছরখানেক ভ‚গর্ভের এই ফেস থেকে প্রায় ৫ লাখ ৮৫ হাজার টন কয়লা উত্তোলন করা হয়। গত জুন মাসের মাঝামাঝিতে ২০১০ নম্বর ফেসে কয়লার মজুদ শেষ হওয়ায় বর্তমানে কয়লাখনিতে উৎপাদন বন্ধ। নতুনভাবে ১ হাজার ৩১৪ নম্বর ফেসে উত্তোলনের জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখন পুরনো ফেসের উৎপাদিত সরঞ্জাম নতুন ফেসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নতুন ফেসে উত্তোলন কার্যক্রম শুরু করতে আরও প্রায় একমাস সময় প্রয়োজন হবে বলে জানায় খনি সূত্র। তবে নতুন স্তর থেকে কয়লা উত্তোলনের জন্য খনি অভ্যন্তরে টানেল তৈরি করা হচ্ছে। সেই টানেল তৈরি করতে গিয়ে কিছু কয়লা পাওয়া যাচ্ছে যা জমিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানান আব্দুল হাকিম সরকার। ১২৫ মেগাওয়াটের ইউনিটটি চালু রাখতে হলে দৈনিক ১২শ’ টন ও ২৭৫ মেগাওয়াটের ইউনিটে ২৮শ’ টন কয়লার প্রয়োজন পড়ে। আটদিন পুরোপুরি চালাতে গেলে ৩২ হাজার মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন হবে।