সারাদেশ: ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের জসিমের বাড়িমুখি মানুষের দীর্ঘ লাইন। সবার চোখে-মুখে শোকের ছায়া। স্বজন হারানোর শোক। গ্রামে যেন ছেয়ে গেছে কোন এক অজানা অন্ধকার। উড়ছে কালো পতাকা। এ বাড়িতে এর আগে এত মানুষের ভিড় এর আগে কেউই দেখেনি। দলে দলে মানুষ আসছে। নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ এমনি শিশু।
গেল শনিবার বিকেল সাড়ে ৫ টা। খালপাড়ের খোলা জমিতে একে একে রাখা হলো পাঁচটি লাশ। জানাজা শেষে একটু পরেই রাখা হবে কবরে। জসিমের অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাকে (জসিমকে) পাওয়া গেল না। পাশের একটি জমিতে আধামরা হয়ে শুয়ে আছে সে। তাকে ঘিরে কয়েকটা মানুষ জড়ো হয়েছে। কেউ কেউ দিচ্ছে সান্ত্বনা। স্বজন হারানোর শোকে সেও যেন লাশ হয়ে গেছে।
গত শুক্রবার বিকেলে দাওয়াত খেয়ে বাড়ি ফেরার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভাঙ্গারতাকিয়া নামকস্থানে শ্যামলী পরিবহনের ধাক্কায় প্রাণ হারায় চালকসহ একই পরিবারের ৫ জন। নিহতরা নবাবপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুরে গ্রামের জসিম উদ্দিনের স্ত্রী নাসিমা (৪৫), শাহাদাত (২৬), নাসির (২৫), সালমা (১৮) ও দেলোয়ার হোসেন (১৭)। অপরদিকে আরেক নিহত সিএনজি চালিত অটোরিকশাচালক রুহুল আমিন ফেনী পৌরসভার ১৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
এলাকার মানুষজন বলাবলি করছেন, এই গ্রামের এর আগে আর কেউ এক সঙ্গে পাঁচটা কবর দেখেনি। যারা কবর খুঁড়ছেন তারাও কি কখনও একসঙ্গে এতো কবর খুঁড়েছেন? দূর থেকে নারী কণ্ঠের বিলাপ (কান্না) শোনা যাচ্ছে। পুরুষদের চোখেও কান্নার ছাপ। একটা সময় কান্না শেষ হতে থাকে। পাঁচ-পাঁচটা তাজা কবরে পানি ছিটিয়ে মৌলভীর (মাওলানার) সঙ্গে মোনাজাত ধরে জসিম। সঙ্গে কয়েক হাজার মানুষ। দোয়া হয় তাদের জান্নাতবাসী হওয়ার জন্য।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে তাদের পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে।