অনলাইন ডেস্ক:
বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমাকে ঘিরে জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় দেশের অন্যান্য বৌদ্ধ মন্দির ও ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর মত কক্সবাজারের ১৪৭ বৌদ্ধমন্দিরে নেয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কক্সবাজারের আইন শৃংখলা বাহিনী ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনের সমন্বয়ে প্রতিটি মন্দির ভিত্তিক ‘নিরাপত্তা কমিটি’র কার্যক্রম শুক্রবার থেকে শুরু হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ কমিটির অনুকূলে রাখাইন ও চাকমাসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ১৪৭ টি মন্দিরে তিনস্তরের নিরাপত্তা বলয়ে ধর্মীয় এ উৎসব পালন করা হবে।
শুক্রবার কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, ‘জঙ্গি হামলার আশঙ্কার তথ্য জানিয়ে পুলিশের সদর দপ্তর থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে জেলা পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে তৎপরতা শুরু করেছি আমরা। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার জেলার বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রতিনিধি ও নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়। এতে বৌদ্ধ মন্দির ও অনুষ্ঠানস্থলকে ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে প্রতিটি মন্দির কেন্দ্রিক পুলিশ, আনসার, কমিউনিটি পুলিশ ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনের সমন্বয়ে একটি করে নিরাপত্তা কমিটি গঠন করা হয়েছে। বুদ্ধ পূর্ণিমার দিনে প্রতিটি মন্দির ও অনুষ্ঠানস্থল ঘিরে তিনস্তরের নিরাপত্তার বলয় গড়ে তোলা হবে। র্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্যান্য আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরাও বাড়তি নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে।’
জেলা পুলিশের একটি মনিটরিং সেলও নিরাপত্তার বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখবে জানিয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে কক্সবাজার এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক পরিচিত। তাই বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন যাতে কোন ধরনের নিরাপত্তার ঘাটতি না হয় জেলা পুলিশ এ বিষয়ে ব্যাপক নজরদারি অব্যাহত রাখবে।’
বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি রবীন্দ্র বিজয় বড়ুয়া বলেন, ‘জেলায় বড়ুয়া, রাখাইন ও চাকমাসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ১৪৭ টি মন্দির রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রতিটি বৌদ্ধ মন্দির কেন্দ্রিক গঠিত ‘নিরাপত্তা কমিটির’ সদস্যদের নিয়ে আলাদা করে সভা করা হয়েছে। এতে বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন কিভাবে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে তার চক আঁকা সম্পন্ন হয়েছে।’
শুধু নিরাপত্তাকর্মীরা নয়, বুদ্ধ পূর্ণিমায় মন্দিরগামী প্রতিজন পূজারীদেরও ব্যক্তিগতভাবে সতর্কতা করতে হবে বলে উল্লেখ করে এ বৌদ্ধ নেতা আরো বলেন, ‘বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন ছাড়াও জেলার ৪টি গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা জোরদারে জেলা পুলিশ কর্তৃক ৪টি সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপের পর স্ব স্ব মন্দির ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
এদিকে বৌদ্ধদের প্রধানতম ধর্মীয় উৎসব ত্রি-স্মৃতি (বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহাপরিনির্বাণ) বিজরিত বুদ্ধ পূর্ণিমাকে ঘিরে কক্সবাজারে নানা কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। দিবসটি পালনে কক্সবাজারের রামুতে সম্রাট অশোকের স্মৃতি বিজরিত রাংকূট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহারে শুক্রবার বিকালে অনুষ্ঠিত হবে গণপ্রবাজ্জ্যা অনুষ্ঠান। যাতে ১০১ জন বৌদ্ধ কূলপুত্রকে শ্রামণ্যধর্মে দীক্ষাদান করা হবে। রাতে হবে বৌদ্ধ সংকীর্তন। পরদিন শনিবার সকালে অনুষ্ঠিত হবে ৮৪ হাজার বুদ্ধ ধর্মস্কন্ধ পূজা। প্রতি বছর এতে সমাগম ঘটে হাজারো পূজারী বৌদ্ধ নরনারীর সম্মিলন।
এছাড়া বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন সকালে উখিয়ায় সার্বজনীন বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন কমিটির উদ্যোগে পালিত হবে পদব্রজে বর্ণাঢ্য শান্তি শোভাযাত্রা। এ বছর পশ্চিমরত্না শাসনতীর্থ বৌদ্ধ বিহার থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়ে পাইন্যাশিয়া ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে শেষ হবে। পরে সেখানে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বশান্তি ও মঙ্গল কামনায় সমবেত প্রার্থনা। এসব কর্মসূচী ছাড়াও জেলার প্রতিটি বৌদ্ধ মন্দিরে ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’ পালনে স্ব স্ব কর্মসূচী নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বৌদ্ধ নেতারা।