মোদির বিজয়ে কীসের বার্তা?

admin May 24, 2019

রংপুর এক্সপ্রেস ডেস্ক
নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয় দফার মেয়াদ যখন ২০২৪ সালে শেষ হবে, তখন তার দেশ ভারত চীনকে টপকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশে পরিণত হবে, যে দেশটি হবে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।


তার দলের মূল নীতিতে হিন্দু জাতীয়তাবাদ থাকলেও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নেতৃত্ব দেবেন মোদি। যে দেশটি কাশ্মীর আর দক্ষিণ চীন সাগরের মতো দুইটি উত্তেজনাপূর্ণ অঞ্চলে অবস্থিত।


তিনি এমন এক সময় ভারতকে দ্বিতীয়বারের মতো নেতৃত্ব দিতে চলেছেন, যখন দেশটির সামনে অনেক সম্ভাবনা ও সুযোগ রয়েছে।


তার এই বিজয় বিশ্বকে প্রভাবিত করতে পারে, এখানে এমন পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হলো-


ভারতের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ধারণা করা হচ্ছে, এ বছরই যুক্তরাজ্যকে টপকে বিশ্বের পঞ্চম অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠবে ভারত, যাদের রয়েছে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য জরুরি এক বিশাল তরুণ কর্মশক্তি।


শুধুমাত্র গত বছরেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতীয় কোম্পানিগুলোয় ৪৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।


দেশটিতে অনেক নতুন নতুন সড়ক তৈরি রয়েছে, প্রান্তিক পর্যায়ে উন্নয়ন, গরীবদের জন্য সস্তার রান্নার গ্যাস, গ্রামে পয়োঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা তৈরি, একটি একক বিক্রয় কর, প্রতিশ্রুতিশীল একটি স্বাস্থ্য বিমা নীতি তৈরির মতো অনেক কাজ হয়েছে।


তবে শ্লথগতির চাহিদার কারণে এখনো দেশটিতে অনেক অর্থনৈতিক সংকট রয়েছে, পাশাপাশি রয়েছে কয়েক দশক ধরে চলা বেকারত্ব।


বাড়তে থাকা অর্থনীতির সঙ্গে তাল মেলাতে হলে দেশটিকে প্রতিমাসে কয়েক লাখ নতুন চাকরি তৈরি করতে হবে, যাতে ভারতের তরুণ জনগোষ্ঠীকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়। গত মেয়াদে নরেন্দ্র মোদির সরকার এটি করতে পারেনি, কিন্তু এবার তাদের তা করতেই হবে।


এখন প্রশ্ন হলো, এই নতুন চাকরি তৈরি করতে গিয়ে ভারতকে কি অর্থনৈতিক সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়াতে হতে পারে?


জাতীয়তাবাদের লড়াই বিশ্বের অনেক দেশেই এখন জাতীয়তাবাদের শ্লোগান শুরু হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’, পুতিনের ‘মেক রাশিয়াকে গ্রেট এগেইন’, শী জিনপিংয়ের ‘চীনের মানুষের নতুন করে জেগে ওঠা’র মতো শ্লোগান রয়েছে।


মোদিও তার নির্বাচনের সময় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রাম ও এবং তার রাজত্বের হারিয়ে যাওয়া গৌরবের শ্লোগান ব্যবহার করেছেন।


তিনি বলেছেন, ‘রাম ছিলেন একজন আদর্শ রাজা এবং তার শাসন ছিল আদর্শ ব্যবস্থা’, ‘রাম রাজ্য ছিল আমাদের প্রতিষ্ঠাতা জনক এবং বিজেপি সরকার সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে’ ইত্যাদি।


যদিও বিজেপি নেতারা বরাবরই বলে আসছেন যে, তারা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নন। ‘তাদের দল ১৩০ কোটি ভারতীয়র জন্যই, ধর্ম নিয়ে তারা কোনো বিভেদ করেন না’, বলেছেন বিজেপি মুখপাত্র নালিন কোহলি।


এখন বিজেপি আবার ক্ষমতায় আসছে আর যারা হিন্দু জাতীয়তাবাদী পরিচয়ের দাবি করছেন, তাদের পোস্টারে দেখা যাচ্ছে রামের ছবি।


গত নভেম্বরে বিবিসির গবেষণায় দেখা গেছে যে, এরকম একটি জাতীয়তাবাদের পরিচয় তৈরির চেষ্টায় মিথ্যা সংবাদ ছড়ানো হয়েছে, ডানপন্থী নেটওয়ার্কে মিথ্যা গল্প তৈরি করা হয়েছে আর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এরকম একটি বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।


শক্তিমান ব্যক্তিত্বের রাজনীতি আর ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব নরেন্দ্র মোদিকে নিজেদের ম্যানিফেস্টোতে শক্তির প্রতীক হিসাবে তুলে ধরেছে বিজেপি, বিশেষ করে পাকিস্তানে জঙ্গি ঘাটিতে অভিযান চালানোর পর।


আগের কয়েকটি রাজ্য নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা কমে গেলেও, ওই হামলার পর তার জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে গেছে।


তার সমর্থকরা বরাবরই, তাদের ভাষায় নেহরু-গান্ধী পরিবারের বাইরে তৃণমূল থেকে নিজের চেষ্টায় তার উঠে আসার বিষয়কে তুলে ধরেছেন।


সাধারণ ভারতীয়দের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে যে, তিনি একজন একনিষ্ঠ, কঠোর পরিশ্রমী আর চৌকস ব্যক্তি। তার নেতৃত্বে ভারত দুইবার পাকিস্তানকে মোকাবেলা করেছে আর একবার চীনকে- যারা এই অঞ্চলের অপর দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ।


বিশেষ করে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতিতে আস্তে আস্তে চীনের পাল্টা শক্তি হয়ে উঠছে ভারত, বলছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক থিংক ট্যাংক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স।


দ্বিতীয় মেয়াদেও যদি মোদি ভারতীয় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা অব্যাহত রাখেন, তাহলে হয়তো দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ভূ-রাজনৈতিক জোট এবং বন্ধুত্বের পালাবদল দেখা যেতে পারে।


ডানপন্থীদের উত্থান ও জনপ্রিয়তা জনপ্রিয় শ্লোগান এবং ধারণা নিয়ে ডানপন্থী রাজনীতি করছে বিজেপি। যখন অভিবাসীদের ‘পশু’ বলে বর্ণনা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, তখন বিজেপি প্রেসিডেন্ট অমিত শাহ অবৈধ অভিবাসীদের বর্ণনা করেছেন ‘তেলাপোকা’ বলে, এবং তাদের বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে ফেলার অঙ্গীকার করেছেন। পাশাপাশি তিনি হিন্দু আর বুদ্ধ শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেয়ারও প্রস্তাব করেছেন।


উত্তর প্রদেশে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, কংগ্রেস সবুজ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে। (সবুজ বলতে ইসলামকে বর্ণনা করা হচ্ছে)


গত পাঁচ বছরে বিজেপির শাসনামলে ভারতে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক সবচেয়ে অবনতি হয়েছে এবং দেশটিতে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।


হয়তো নির্বাচনে জয়ের কৌশল হিসাবেও বিভেদের এসব শ্লোগান নেয়া হতে পারে, কিন্তু সেখান থেকে ফিরে আসাটা কঠিন। আর বাস্তবতা হলো, জনপ্রিয় নেতারা সাধারণত সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের সঙ্গেই থাকেন। ফলে প্রশ্ন হলো, তারা কি আসলে কখনো সেখান থেকে ফিরতে চাইবেন কিনা?


জলবায়ু পরিবর্তন গ্রিনপিস এন্ড অ্যানালাইসিসের মার্চ ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে বায়ু দূষণের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে ৩০টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ২২তম।


যদিও চীনের জনসংখ্যাকে ছাড়াতে ভারতের আরো পাঁচবছর সময় লাগবে, তবে বিশ্বব্যাংক সতর্ক করে দিয়েছে, সামনের বছর নাগাদ ভারতের পানি, বাতাস, মাটি এবং বনের ওপর চাপের দিক থেকে দেশটি বিশ্বের শীর্ষে উঠে যাবে।


একই সঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি, ঘন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আর লাখ লাখ মানুষের দারিদ্রসীমার নীচে থাকার বিষয়টি নরেন্দ্র মোদিকে কঠিন সংকটের মুখে ফেলতে পারে।


অর্থনীতির যেকোনো ধরণের শ্লথগতির ফলে চাকরি বাজারে মন্দা নামবে। অন্যদিকে অনিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড দেশটির প্রকৃতির ওপর প্রভাব ফেলবে, যা পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে এবং ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে।


তবে এসব কিছু সত্ত্বেও প্যারিস চুক্তি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি এবং ভারতের গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের হার আগামী ১০ বছরের মধ্যে ৩৫ শতাংশ কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন।


সূত্র: বিবিসি বাংলা

এই বিভাগের আরও খবর

পরবর্তী পোস্ট
« Prev Post
পূর্বের পোস্ট
Next Post »
নিচের বক্সে মন্তব্য লিখুন

Disqus
আপনার মন্তব্য যোগ করুন

No comments

Image Gallary

 
1 / 3
   
Caption Text
 
2 / 3
   
Caption Two
 
3 / 3
   
Caption Three