রংপুর এক্সপ্রেস ডেস্ক:
এবার নিয়ে পঞ্চম বারের মতো কারা হেফাজতে ঈদ করছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এর আগে চারবার তিনি কারাগারে ঈদ করেন। খালেদা জিয়া বর্তমানে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে অবস্থান করছেন। তাই সেখানেই কাটছে তার এবারের ঈদ। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে বিএনপি এবং সরকার ও হাসপাতালপক্ষ পাল্টা বক্তব্য দিচ্ছে।
বিএনপি বলছে, খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। গত ২৪ মে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রশ্ন করেন চিকিৎসা না দিয়ে সরকার কি খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে চায়? তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বন্দী অবস্থায় খালেদা জিয়ার কোনো ক্ষতি হলে তার দায়-দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।
এদিকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও বিএনপির মুক্তি দাবি প্রসংগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে মেরে ফেলার মতো এতটা নিষ্ঠুর নয় আওয়ামী লীগ সরকার। খালেদা জিয়ার মু্ক্তির জন্য সরকারের ওপর যে চাপ সৃষ্টি করা দরকার ছিল বিএনপি তাতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
অপরদিকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক গত ২৯ মে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। ১ মাস ২৯ দিন আগে ভর্তি হওয়ার সময় ওনার শারীরিক যে সমস্যা ছিল, সে অবস্থানের চেয়ে দুই মাসে অনেক উন্নতি হয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কে মাহবুবুল হক বলেন, খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর্থারাইটিসের অনেক উন্নতি হচ্ছে। তার জিহ্বায় যে ঘা হয়েছিল, সেটা আমাদের প্রায় সবার মুখেই হয়। সেটা অন্য কিছু না। জিহ্বার ঘা ৯০ শতাংশ সেরে গেছে। তিনি রোজা রাখছেন। ছোলাসহ অন্য স্বাভাবিক খাবারও খাচ্ছেন।
জানা গেছে, হাসপাতালে খালেদার সঙ্গে আছেন গৃহকর্মী ফাতেমা। তার তৈরি খাবার ও পরিবার থেকে পাঠানো খাবার ঈদের দিন খাবেন খালেদা জিয়া।
এবার ঈদের দিন দলের সিনিয়র নেতারা প্রথমে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন। এরপর কারাবন্দি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বিএসএমএমইউ যাবেন। সেখান থেকে বনানীতে খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারত করবেন।
ঈদের দিন বিএসএমএমইউ হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়।
এবার নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাগারে ঈদ হবে পঞ্চমবার। এর আগে ১/১১ সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দু’টি ঈদ কারাগারে কাটাতে হয়েছে বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়াকে। জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় ঘোষিত সাবজেলে ওই দুই ঈদে খালেদা জিয়ার পাশের আরেকটি সাবজেলে ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত সাবজেলে থাকার সময় ২০০৭ সালের ১৪ অক্টোবর প্রথম উদযাপিত হয় রোজার ঈদ। এরপর ২০০৭ সালের ২১ ডিসেম্বর কোরবানির ঈদও ওই সাবজেলেই উদযাপন করেন তিনি। ওই কারাগারে ৩৭২ দিন কাটানোর পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে মুক্তি পান।
খালেদা জিয়া ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি রাজনীতিতে যোগ দেয়ার পর কয়েকবার গ্রেপ্তার হন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর তিনি গ্রেপ্তার হন। তবে তখন তাকে বেশিদিন বন্দি থাকতে হয়নি।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ঈদের দিন কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা দেখা করতে পারেন। তারেক রহমানের পরিবার, কোকোর স্ত্রী ও মেয়েরা লন্ডনে থাকায় খালেদা জিয়ার ভাই, বোন ও তাদের ছেলে-মেয়েরা কারাগারে দেখা করতে যাবেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ১৭ বছর দণ্ডিত খালেদা জিয়া। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি কারাবন্দি।