পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি বগুড়াতে ঈদ করতে যাচ্ছেন রহমত উল্লাহ। সড়কে যাতে যানজটে পড়তে না হয় সে বিষয়টি মাথায় রেখে ভাড়া করা মাইক্রোতে করে গুলশান থেকে মঙ্গলবার সকাল সকাল রওনা হন বাড়ির উদ্দেশে। সাতটার মধ্যে টাঙ্গাইল পৌঁছার পর তাদের গাড়ি আটকে যায় যানজটে।
যানজটের ভয়াবহতা এতটা ভয়াবহ যে দুপুর একটা নাগাদ সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে তাদের গাড়ি। সামনের সড়কের পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ যে কখন নাগাদ গন্তব্য পৌঁছতে পারবেন তা নিয়ে চিন্তিত তিনি। পরিবার নিয়ে আনন্দের ঈদযাত্রা সীমাহীন দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে এই পরিবারটির জন্য।
শুধু রহমত উল্লাহই নয়, ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের দিকে যাওয়া সবাইকে যানজটে নাকাল হতে হচ্ছে। জানা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ অংশে যানজটের কারণে সেতুতে টোল আদায় সকাল থেকে বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। সেতুর পশ্চিমপাড় স্বাভাবিক হওয়ার পর পুনরায় টোল আদায় শুরু হবে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার ভোর রাত থেকে সকাল পৌনে ১০টা পর্যন্ত মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতুপুর্ব থেকে মির্জাপুর উপজেলার পাকুল্লা পর্যন্ত গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।
এছাড়া সড়কে বিভিন্ন এলাকায় মানুষ পরিবহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব, এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, রাবনা বাইপাস, বাঐখোলা, করটিয়া হাটবাইপাস, নাটিয়াপাড়া ও পাকুল্লায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
হানিফ পরিবহনের চালক নাজমুল মিয়া জানান, মহাসড়কে গাড়ির প্রচুর চাপ। ফলে সকাল থেকে মির্জাপুরের পাকুল্লা থেকে টাঙ্গাইলের বাঐখোলা আসতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লেগেছে। যা অন্য সময় ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগতো।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন জানান, গাড়ির অতিরিক্ত চাপ থাকায় থেমে থেমে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পার থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সিরাজগঞ্জ থেকে গাড়ি টানতে না পাড়ায় এ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
সোলায়মান নামের একজন যাত্রী রাস্তায় যানজটের কথা তুলে ধরে বলেন, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করবো তাই সোমবার বিকাল পাঁচটায় রওনা দিয়ে রাত ২টায় টাঙ্গাইলে আসলাম।
যদিও গত কয়েকদিনে সড়কে যাত্রী চাপ থাকলেও এতটা দুর্ভোগে পড়তে হয়নি। রাস্তা অনেকটা ফাঁকাই ছিল। তবে গার্মেন্টস ছুটি হওয়ায় এই এলাকায় সড়কে যাত্রী চাপ বেড়েছে বহুগুণ। এছাড়া বৃষ্টির কারণেও গাড়ি ধীরগতিতে চলছে। এর মধ্যে ভোরে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে যাত্রীবাহী একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে চারজন নিহত হলে যানজট আরও তীব্র হয়।
বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৩৫ হাজার ২৭১টি গাড়ি পার হয়েছে। এতে সেতুর টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৪৪ হাজার ৯৬০ টাকা।
উত্তরের পথে তীব্র যানজট থাকলেও ভিন্নচিত্র আছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার অনেকটা স্বস্তি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লার যাত্রীরা। যদিও মঙ্গলবার কুমিল্লা এলাকায় হালকা যানজটের খবর পাওয়া গেছে।